বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের জনসংখ্যা সংকট: চ্যালেঞ্জ এবং প্রভাব!

দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ—বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান—বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। জনসংখ্যার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এই দেশগুলোর অর্থনীতি, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, এই তিন দেশ মিলিয়ে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ বসবাস করে। যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ঘনবসতির কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা এখন এসব দেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি প্রতিদিন পত্র পত্রিকা খুললেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন।অর্থনৈতিক দিক থেকে অধিক জনসংখ্যা মানে কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর তীব্র চাপ। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে- যেখানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে, তাদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ২০% এই তিন দেশে বসবাস করছে। ভারতের জনসংখ্যা ২০২৩ সালে চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ হয়েছে, কিন্তু সেই জনসংখ্যার বড় অংশই দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে ব্যর্থ হওয়ায় দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব সমস্যা প্রকট হচ্ছে।পরিবেশের দিক থেকে অধিক জনসংখ্যা বায়ু, পানি এবং ভূমি দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। ভারতের দিল্লি বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর একটি, যেখানে প্রতি ঘনমিটারে PM2.5 দূষণের মাত্রা ২০২৩ সালে ৯৯.৭ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত মানের চেয়ে যা ২০ গুণ বেশি। একইভাবে, ঢাকার বায়ুদূষণ এবং করাচির পানি দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিক জনসংখ্যার কারণে এসব শহরে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবহার পরিস্থিতি আরও জটিল করছে।স্বাস্থ্য খাতেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব সুস্পষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলগুলোতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রোগবালাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। WHO’র মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ডায়রিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগে আক্রান্ত হয়। অপরদিকে, পাকিস্তান ২০২৩ সালে জলবাহিত রোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হলেও অধিক জনসংখ্যার কারণে সেই সেবার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চীন তাদের এক সন্তান নীতি'র মাধ্যমে ১৯৭৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল হয় এবং তাদের অর্থনীতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। বাংলাদেশের মতো দেশে পরিকল্পিত পরিবার এবং শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও অনেক দূর যেতে হবে আমার মতে। বিশেষ করে এইক্ষেত্রে ধর্মীয় দিকটা খুব স্পর্শকাতর হিসেবে কাজ করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় আমার মতে, কার্যকর পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।পরিবেশ সংরক্ষণে টেকসই নীতি গ্রহণ, যেমন পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন করে জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা।সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।এখনো যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে আমাদের এই তিন দেশের ভবিষ্যৎ হবে আরও কঠিন এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। তাই সময় এসেছে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার।

Post a Comment

Previous Post Next Post