কোটা নিয়ে রাজনীতি, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন!

 

ছবিঃ সংগৃহীত

আমার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে দু'জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। একজন আমার ফুফুর স্বামী (বাবার ফুফাতো বোনের স্বামী), আরেকজন আমার বাবার আপন মামা। তো আমি কেন তাদের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি?

কারণ তো অবশ্যই আছে! 

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা আর তার পরিবার নিয়ে কথা বলার অধিকার কারোর নাই। এমনকি যারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে তারা রাজাকারের মতো ব্যবহার করে যাচ্ছে। অনেকটা আন্দোলন কারীদের কটাক্ষ করেই কথা বলেছেন। 

এই দেশ স্বাধীন করার পিছনে মুক্তিযোদ্ধার অবদান অস্বীকার করার প্রশ্ন কখনোই কেউ করে নি ; এমনকি আজও কেউ করছেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই আমরা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশ পেয়েছি এটা চিরন্তন সত্য। তবে তাদের ছেলে-মেয়ে কিংবা নাতিপুতিদের যে কোটা দিয়ে আপনি সম্মানিত করতে চাচ্ছেন, তারা কি আদৌ সেই আদর্শ লালন করে? 

এবার আসি আমি কেন শুরুতে আমার আত্মীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গ টানলাম। আমার এক ফুফু, তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা। ফুফুর দুই ছেলে, এক ছেলে তিন বাচ্চার বাপ আরেকজন এক বাচ্চার। আমার ফুফুর বড় ছেলে বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী, সে একসময় মাদ্রাসায় পড়েছে। এখন একজন মানুষ বিএনপি করতেই পারে তাতে সমস্যা কি? 

সমস্যা এখানে না। আমার সেই ফুফাতো ভাই বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের খেলা পড়লে 'পাকিস্তান' সাপোর্ট করে🙂

যান এটাও বাদ দিলাম, হইতো পছন্দের দল। 

কিন্তু সে প্রায় সময় আড্ডায় বলে, বাংলাদেশ স্বাধীন করা ভুল হয়েছে। এই দেশ নাকি পাকিস্তান থাকলেই ভালো হতো! 

সে পাকিস্তানে মগ্ন পুরোদস্তুর। অথচ সে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার ছোট ভাই আরও এক ধাপ এগিয়ে, মাস খানেক আগে শুনলাম জুয়া খেলা নিয়ে এক লোকের সাথে তর্ক করে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন।

এখন আসি আবার বাবার মামার জীবন নিয়ে, সে একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার ছেলেদের পড়ালেখা করিয়ে কোটায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে দুঃখের বিষয় কি জানেন? 

বাবার মামাকে তার ছেলেরা দেখেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেয়ের ঘরে থেকেছেন এমনকি অসুস্থতার সময় ছেলেরা টাকা দিলেও বাবার চেহারা এসে দেখেননি। এভাবে মৃত্যুবরণ করেছে বুকে কষ্ট নিয়ে। মরার পর দুই ছেলে এসেছিলো তামাশা দেখতে। 

এতকিছু কেন বললাম? 

একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অবশ্যই তার বীরত্বের জন্য সম্মান এবং সম্মানী দিয়ে যেতে হবে এবং এইটা অবশ্যই উচিত। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকেও বীর ভাবা আর খাটি দেশপ্রেমিক ভেবে কোটা দিয়ে তাদের সুবিধা দেওয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। 

আপনি জানলে অবাক হবেন। আমি এমনও ঘটনা শুনেছি  কিছু লোক ৪৭ এর দাঙ্গায় অনেক হিন্দুকে গৃহত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলো কিন্তু তাদেরই পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে আবার ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। এখন বলেন তো- যেখানে এক প্রজন্ম দেশদ্রোহী, কট্টরবাদী সেখানেই তাদের আরেক প্রজন্ম আবার দেশপ্রেমী এবং অসাম্প্রদায়িকতা ধারণ করে।

তাই, এক জেনারেশনের বীরত্ব আর দেশপ্রেমের লিগ্যাসি পরবর্তী প্রজন্মও রক্ষা করে যাবে এই ভাবনা রেখে কয়েক প্রজন্মকে সুবিধা দিয়ে যাওয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য না। 

তারউপর সেটা যদি অন্যের মেধা আর পরিশ্রমকে বাধাগ্রস্ত করে হয় তাহলে তো সেটা আরও বেশী নেক্কারজনক। 

যে ৩০% কোটা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী জেনারেশনের জন্য বরাদ্দ করেছে আবার সেটা অনেকটা আবেগের বশবর্তী হয়েই করেছে। তবে এই আবেগের কারণে যে অনেকগুলো মেধা তাদের প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে সেটা আরেকবার সরকারের ভাবা উচিত। বীরের পরিবারের মধ্যে যদি বীরত্বের রক্ত থাকে তাহলে সে অবশ্যই মেধা যুদ্ধের মাধ্যমেই চাকরি পাবে। 'কোটা' দিয়ে তাদের মেধাকে সবল থেকে আরও বেশী দূর্বলই করা হবে আমার মতে। তবে কোটা যদি রাখতেই হয়, তাহলে ৫% রাখুন। অন্তত বেকারত্বের এই দেশে সাধারণ বেকারদের এইভাবে নিরীহ করে দিবেন না। কোটা দিয়ে নয়, মেধা দিয়েই মেধাবী হওয়ার সুযোগ করে দিন সবাইকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post