আজকে আপনাদের বাস্তবতা থেকে একটা মজার গল্প বলবো! চাইলে আপনারা পড়তে পারেন। পড়লে একটু মজা পাবেন আর একটা তথ্য জানতে পারবেন, এইটুকুই।
বলি তাহলে, আমি ২০১৪ সালে এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে কম্পিউটার শিখতে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে যাই। তো সেখানে কম্পিউটার শিখতে গিয়ে ঘটনাক্রমে আমি উদ্যোক্তা হিসেবে জবে ঢুকে যাই বছর খানেকের জন্য। সেখানে আমার মূলত কাজ কি ছিলো জানেন?
আপনারা তো ইতিমধ্যে ভারতীয় 'পঞ্চায়েত' সিরিজটা দেখে নিয়েছেন। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই সিরিজ। সবার হৃদয়ে যায়গা করে নিয়েছে টিভিএফের নির্মাণে অ্যামাজন প্রাইমে রিলিজ হওয়া 'পঞ্চায়েত'। তো সেই সিরিজে অফিস এসিস্ট্যান্ট 'চন্দন' যে কাজগুলো করতো, সেই কাজগুলোই আমিও করতাম ইউনিয়নে।
এখন আসি মূল গল্পে, আমাদের উপজেলার-ই একটা ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের হঠাৎ শুনলাম সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পরও বিয়ে ভেঙে গেছে। শুনে খারাপ লাগলো!
তবে যে কারণে বিয়ে ভাঙলো, সেই কারণটা শুনে বড্ড হাসিও পেয়েছিলো। তো, বিয়ে কেন ভাঙলো?
ছেলের পরিবার যখন মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলেছে তখন ছেলের পরিবার জানিয়েছে তাদের ছেলে একজন 'সচিব'। মেয়ের পরিবার তো এইটা শুনে মহা খুশি!
তারা ধরেই নিয়েছে তাদের মেয়ের জামাই একজন বিসিএস ক্যাডার এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব। বিয়ের কথাবার্তা অনেকটা ঠিকঠাক হওয়ার পরই, যখন মেয়ের পরিবার জানতে পারলো যে ছেলে আদতে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের 'সচিব' আর বিসিএস ক্যাডারও নয় তখন তাদের হুঁশ আসলো আর বিয়েটা ভেঙে দিলো!
ইউনিয়নে আমরা যখন এই কাহিনি শুনলাম, কষ্ট পাওয়ার বদলে সবাই হাসাহাসি করলো। হাসাহাসি করলেও বিষয়টা কিন্তু আসলেই কনফিউজিং। বিসিএস পাশ করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে একজন মন্ত্রনালয়ের 'সচিব' হয় আবার স্নাতক/ডিগ্রি পাশ করে জেলা পরিষদের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে 'সচিব' হয় ; যেটা ইউনিয়ন পরিষদ 'সচিব'।
তো আপনিই বলেন, এই বিষয়টা বুঝিয়ে না বললে তো যে কেউই কনফিউজড হবে! নাকি?
মন্ত্রনালয়ের সচিব আর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। আকাশ-পাতাল তফাৎ দুটো পদ কিন্তু পদের নাম এক!
এখন সব কথার মূল কথা, গত ১ জুলাই সংসদে ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) বিল-২০২৪ পাস’ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদের ‘সচিব’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ইউনিয়ন পরিষদ ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।
আসলে এতদিনের 'সচিব' শব্দটার যে কনফিউশান ছিলো সেটা অবশেষে দূর হতে যাচ্ছে। আশা রাখি আর কখনো- কোন অফিসের সচিব ; সেটা বোঝার ভুলে কারো বিয়ে ভাঙবে না! 🙂