গতকাল 'শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ'-এর ৪র্থ পর্বে বিনিয়োগ চাইতে এসেছিলেন রোবোওয়ে ল্যাবস, রিভাইভাল বাংলাদেশ, পালকি মটরস লিমিটেড এবং প্যারেন্টস কেয়ার লিমিটেড নামের চারটি স্টার্টআপের উদ্যোক্তারা।
আর গতকাল শার্ক হিসেবে হটসিটে ছিলেন, আহমেদ লিয়ন, গোলাম মুর্শেদ, নাজিম ফারহান, সামি আহমেদ এবং নাভিন আহমেদ।
রোবোওয়ে ল্যাবসঃ তারা মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে রোবট তৈরি করে। তারা মূলত নানান অফিসের রিসিপশনে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করবে এমন মডেলের রোবট তৈরিতে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রস্তাব ছিলো ৮% শেয়ারের বিনিময়ে ২৫ লাখ টাকা। উদ্যোক্তারা দাবী করছিলো তারা এডভান্স লেভেলের রোবট নিয়ে কাজ করছে এবং অলরেডি দুটো রোবট তারা সেল করেছে। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার জন্য আরেকটা নিয়েছে A2I প্রতিষ্ঠান। শার্ক গোলাম মোর্শেদ রোবটের সাথে কথা বলতে গেলে রোবটে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তখন রোবট ঠিকঠাকভাবে উত্তর দিতে পারছিলো না এবং পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের কনফিডেন্সেও অনেকটা দূর্বলতা লাগছিলো। মূলত এখন আমাদের পাশের দেশ ভারতেও খুব এডভান্স লেভেলের রোবট তৈরি হচ্ছে; সে অনুযায়ী উদ্যোক্তারা যে রোবটটা নিয়ে এসেছিলো এইটা অনেকটা দূর্বল। এই কারণে শার্করা এই প্রতিষ্ঠানে ফান্ডিং করে নি, তবে সব শার্ক উদ্যোক্তাদের কাজকে এপ্রিশিয়েট করেছে।
প্যারেন্টস কেয়ার লিমিটেডঃ তারা মূলত কাজ করে চাকুরীজীবী ফ্যামিলির বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের সেবা করা নিয়ে। যারা ওয়ার্কিং ফ্যামিলি; পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকুরী বা ব্যবসা করে এমন ফ্যামিলিতে বয়স্ক মানুষদের সেবা এবং সাধারণ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নার্স/কেয়ার গিভার দিয়ে থাকে প্যারেন্টস কেয়ার লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রস্তাব ছিলো ১২.৫ কোটি টাকার ভ্যালুয়েশনে ৪% শেয়ারের বিনিময়ে ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে আমাদের দেশের শহরগুলোতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকুরীজীবী হওয়ার কারণে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখাশোনার জন্য কেয়ার গিভারের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের বেশ ভালো একটা সম্ভাবনা রয়েছে। শার্ক সামি আহমেদ প্রথম অফার দেওয়ার পর আবার রিভাইজ অফার দেয় ৪% শেয়ারের বিনিময়ে ২৫ লাখ টাকা + বাজারে বিদ্যমান লোন ইন্টারেস্টের চেয়ে কম ইন্টারেস্টে ২৫ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডার লোন। উদ্যোক্তারা পরবর্তীতে এই অফার গ্রহণ করে।
রিভাইভাল বাংলাদেশঃ এই প্রতিষ্ঠান জাপান এবং বাংলাদেশের অথেনটিক ফ্যাশনকে একত্রিত করে একটা ফ্যাশন উইয়্যার প্রতিষ্ঠান দাড় করিয়েছে। তাদের প্রস্তাব ছিলো ২৫ কোটির ভ্যালুয়েশনে ১% শেয়ারের বিনিময়ে ২৫ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠান এখনো প্রি-রেভিনিউ এবং মার্কেট ফিট হতে পারে নি৷ তারা কিছু অর্ডার পেলেও সেটার বিক্রি এখনো শুরু করতে পারে নি পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যার কারণে শার্করা এই প্রতিষ্ঠানে ফান্ডিং করতে আগ্রহী হন নি। পার্সোনালি আমার কাছেও এই প্রতিষ্ঠানকে অতটা স্ট্রং মনে হয় নি।
পালকি মটরস লিমিটেডঃ শার্ক ট্যাঙ্কের এই পর্বের সবচেয়ে ইনোভেটিভ প্রতিষ্ঠান মনে হয়েছে আমার 'পালকি মটরস লিমিটেড'। তারা একটা দারুণ কাজ করছে; ইলেকট্রনিক ভাইকেল তৈরি করে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও ইলেকট্রনিক ভাইকেলের প্রচুর চাহিদা আছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ঐভাবে এর চাহিদা সৃষ্টি না হলেও আগামী ২-৩ বছরে বেশ ভালো একটা মার্কেট তৈরি হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই৷ এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রস্তাব ছিলো ৩৩.৩৩ কোটি টাকার ভ্যালুয়েশনে ৩% শেয়ারের বিনিময়ে ১ কোটি টাকা। শার্করা এই প্রতিষ্ঠানের কাজকে এপ্রিশিয়েট করেছে বেশ।
আহমেদ লিওন প্রথমে ৬% শেয়ারের বিনিময়ে ১ কোটি টাকা (এখনই ৫% এর জন্য ৫০ লাখ টাকা + সব অর্ডার কমপ্লিট করলে ১% এর জন্য ৫০ লাখ টাকা) এর ডিল অফার করে। পরবর্তীতে আবার অফার রিভাইজ করলেও উদ্যোক্তারা অফারটি গ্রহন করে নি। পরবর্তীতে শার্ক সামি আহমেদ ১ কোটি টাকা ওয়ার্ক অর্ডার ফাইন্যান্সিং, মার্কেট রেটে ইন্টারেস্ট সহ ফেরত দেওয়ার প্রেক্ষিতে অফার করে। উদ্যোক্তারা সামি আহমেদের এই অফার কোনো নেগোসিয়েশন ছাড়ায় গ্রহন করে।
শার্ক ট্যাঙ্কের এই পর্বে আসা চারটি প্রতিষ্ঠানের দুটোই ইনোভেটিভ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রোবট তৈরির রোবোওয়ে ল্যাবস ভালো কাজ করছে, তবে তাদের আরও এডভান্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোবটকে অত্যাধুনিক করা জরুরি।
নিজেদের সফটওয়্যার বিল্ড করে তারা যদি রোবটকে অত্যাধুনিক করতে পারে তাহলে সামনে তাদের প্রতিষ্ঠান বড় হবার সম্ভাবনা প্রচুর রয়েছে। রোবোওয়ে ল্যাবস এর উদ্যোক্তাদের জন্য শুভকামনা। অন্যদিকে পালকি মটরস লিমিটেড বেশ ভালো কাজ করছে- এখনকার সময়ে পরিবেশ রক্ষায় ইলেকট্রনিক ভাইকেলের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে এখনো ঐভাবে চাহিদা বর্তমানে না থাকলেও সামনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে ইলেকট্রনিক ভাইকেলের। আশা রাখি তারা এভাবে কাজ করে যাবে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান হবে পালকি মটরস লিমিটেড।
[শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ দেখতে প্রতি শুক্রবার রাত ১০টায় চোখ রাখুন Deepto TV এবং Bongo অ্যাপে]