শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশের তৃতীয় পর্ব এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের জয়জয়কার!



গতকাল রাত্রে শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশের তৃতীয় পর্ব প্রচারিত হয়েছে। শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর ৩য় পর্বে বিনিয়োগ চাইতে এসেছিলেন ওস্তাদ, পার্কওয়ে ফার্নিচার, ইজিবাজার এবং ইংলিশ চ্যাম্প নামের চারটি স্টার্টআপের উদ্যোক্তারা। তৃতীয় পর্বে শার্ক হিসেবে হটসিটে ছিলেন- ফাহিম মাশরুর, কাজী এম হাসান, সামি আহমেদ, ফাতিন হক এবং সাওসান খান মঈন।


ইংলিশ চ্যাম্পঃ এই প্রতিষ্ঠান মূলত স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের অনলাইনে কোর্সের মাধ্যমে ইংরেজিতে দক্ষ হতে ক্লাস পরিচালনা করে। তারা শূন্য বাজেট থেকে বর্তমানে প্রায় ১.৫ কোটি অঙ্কের উপরে বিজনেস নিয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ৫ কোটির ভ্যালুয়েশনে ১০% শেয়ারের বিনিময়ে ৫০ লাখ টাকা ফান্ডিং চেয়েছিলো। তবে সবশেষে দরদাম করে শার্ক ফাহিম এবং সামি ১৮% শেয়ারের বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা ক্যাশ + ১০% ইন্টারেস্টে  ৩০ লাখ টাকা লোনের অফার দেয় আর এই অফারটি ইংলিশ চ্যাম্পের উদ্যোক্তারা গ্রহণ করে।


ইজিবাজার ডটকমঃ এই প্রতিষ্ঠান মূলত মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য কিস্তিতে বাজার-সদাই দিয়ে থাকে অনলাইন-অফলাইনে। ই-কমার্স ব্যবসা তবে ইজিবাজারের উদ্যোক্তা মূলত মহৎ কাজ করার লক্ষে এই প্রতিষ্ঠানটি দাড় করিয়েছে। অল্প আয়ের মানুষদের গায়ের মূল্যে বাজার-সদাই দিয়ে কিস্তিতে টাকা আদায় করে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ২০% শেয়ারের বিনিময়ে ৩০ লাখ টাকা ফান্ডিং চেয়েছিলো। ব্যবসা এখনো স্ট্যাবল না হওয়াতে এবং কিছুটা রিস্ক থাকাতে শার্করা এই প্রতিষ্ঠানে কোনো ফান্ডিং করে নি। তবে শার্ক সামি আহমেদ উদ্যোক্তাকে তার মহৎ কাজের জন্য সরকারি ১০ লাখ টাকার একটা ফান্ডিং পেতে সাহায্য করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।


পার্কওয়ে ফার্নিচারঃ এই প্রতিষ্ঠান মূলত ফার্নিচারের নানাধরণের আইটেম তৈরি এবং বিক্রিতে কাজ করে। গত ১৩ মাসে তারা প্রায় অর্ধ কোটি টাকার সেল করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তারা ইন-হাউজ ফার্নিচার তৈরি করে না, তারা মূলত একাধিক ভেন্ডরদের মাধ্যমে ফার্নিচার তৈরি করে তারপর তাদের প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে। ১৩ মাসে মোটামুটি ভালো একটা স্ট্যাবল বিজনেস তৈরি করেছে পার্কওয়ে ফার্নিচার, সেজন্য শার্ক ফাতিন হক এবং সাওসান খান ইন্টারেস্টেড হন ফান্ডিং করার জন্য। পার্কওয়ে ফার্নিচারের উদ্যোক্তা ৩ কোটি টাকার ভ্যালুয়েশনে ১০% শেয়ারের বিনিময়ে ৩০ লাখ টাকা ফান্ডিং চান। সবশেষে পার্কওয়ে ফার্নিচার ফাতিন হক এবং সাওসান খান থেকে ১৮% শেয়ারের বিনিময়ে ১৫ লাখ টাকা ক্যাশ + ৭.৫ লাখ টাকা ওয়ার্ক অর্ডার ফাইন্যান্সিং + ৭.৫ লাখ টাকা মূল্যের ঢাকার সবচেয়ে প্রিমিয়াম জায়গায় ১ বছর শোরুম ব্যবহারের সুযোগ, রয়‍্যালটিতে ৬০ লাখ টাকা ফেরত এর বিনিময়ে ডিল ওকে হয়।


ওস্তাদঃ ওস্তাদ মূলত এআই বেইজড অনলাইন লার্নিং একটা প্রতিষ্ঠান। যারা মূলত অনলাইনে নানা ধরণের আইটি বেইজড কোর্স প্রোভাইড করে থাকে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোর্স শেষ হলে নানান প্রতিষ্ঠানে দক্ষ লোকবল নিয়োগ করে থাকে৷ ওস্তাদ এখন পর্যন্ত বেশ লাভজনক ব্যবসা তৈরি করে ফেলেছে আইটি বিজনেসে। ২০২৩ সালে ওস্তাদ ৭.৫ কোটি টাকা রেভিনিউ করে আর ২০২৪ সালে টার্গেট ২৫ কোটি রেভিনিউ করার। ওস্তাদ-এর উদ্যোক্তাদের প্রস্তাব ছিলো- ৮০ কোটি টাকার ভ্যালুয়েশনে ১.২৫% শেয়ারের বিনিময়ে ১ কোটি টাকা। সবশেষে ফাহিম মাশরুর, কাজী এম হাসান এবং সামি আহমেদ ৬% শেয়ারের বিনিময়ে ১ কোটি টাকা (টাকার বিনিময়ে ১.৭% শেয়ার + ৪.৩% অ্যাডভাইজরি শেয়ার) বিনিময়ে ডিল ওকে করে।

পরিশেষে আজকের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ডিল ছিলো ওস্তাদ লার্নিং প্রতিষ্ঠানের। ৫-৬ বার নেগোসিয়েট এবং কাউন্টার অফারের পর সবশেষে ডিলটা ফাইনাল হয়। দুই তরুণ বন্ধুর ছোট প্রচেষ্টা থেকে আজ ৮-১০ কোটির ব্যবসা তৈরি করে ফেলেছে ওস্তাদ; খুবই এপ্রিশিয়েট করার মতো একটা বিষয়। আমাদের দেশের তরুণরা কতটা এগিয়ে যাচ্ছে এই সময়ে শার্ক ট্যাঙ্ক এইটার প্রমাণ। ওস্তাদ, পার্কওয়ে ফার্নিচার, ইজিবাজার এবং ইংলিশ চ্যাম্প ; চারটি প্রতিষ্ঠানের জন্যই রইলো শুভকামনা। আমাদের তরুণরা এগিয়ে যাক অদম্য সাহস নিয়ে নতুনের পথে।


Post a Comment

Previous Post Next Post